Introduction to Blockchain
Lesson Transcript
ব্লকচেইন হল একটি পিয়ার-টু-পিয়ার লেজার সিস্টেম যা দ্বারা পিয়ারদের একে অপরের সাথে সরাসরি লেনদেন করা যায়। যদি আরো সহজে বলি, ব্লকচেইন হচ্ছে ব্লক দিয়ে তৈরি চেইন বা ব্লকের চেইন। অনেকগুলো ব্লককে একটির সাথে আরেকটি জোড়া দেওয়ার মাধ্যমে ব্লকের একটি শিকল তৈরি করাই হচ্ছে ব্লকচেইন। যে ব্লকগুলোর দ্বারা এই চেইনটি তৈরি করা হয় সেই ব্লকগুলো মূলত তথ্য সংরক্ষণ করে। মূলত ব্লকচেইন হচ্ছে একটি ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার, এই ডিস্ট্রিবিউটেড লেজার সকলের জন্য উন্মুক্ত।
ব্লকচেইন প্রযুক্তিকে সামপ্রতিক সময়ের এক অভিনব উদ্ভাবন বলা হচ্ছে। ব্লকচেইন হলো তথ্য সংরক্ষণে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে নিরাপদ ও উন্মুক্ত পদ্ধতি। সাতোশি নাকামতো ছদ্মনামের এক ব্যক্তি বা গ্রুপকে ব্লকচেইন প্রযুক্তির উদ্ভাবক বলে মনে করা হয়। ২০০৯ সালে বিটকয়েন সফটওয়্যার প্রকাশিত হওয়ার পরই বিশ্বব্যাপী ব্লকচেইন প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটে।
একসময় বড় বড় লেজার বইয়ে ব্যাংকের যাবতীয় হিসাব-নিকাশ রাখা হতো। যাবতীয় লেনদেন রেকর্ড করার জন্য সকল শাখায় একটা বড় সাইজের লেজার বুক থাকতো। সময়ের পরিক্রমায় কোর-ব্যাংকিং- সল্যুশন ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। ব্যাংকিং চলে হাতের মুঠোয়। এই প্রযুক্তিতে সকল লেনদেনের তথ্য থাকছে কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজে। তবে এই প্রযুক্তিতেও দুটি বড় ঘাটতি থেকে যায়। একটি হলো নিরাপত্তা ঝুঁকি, অন্যটি হলো তাৎক্ষনিক বৈশ্বিক লেনদেন করতে না পারা। এই ঘাটতি পূরণে প্রযুক্তির পথপরিক্রমায় নতুন সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ব্লকচেইন, যার গতি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা সহ অনেক বৈশিষ্ট্য এর দিক থেকে শতভাগ এগিয়ে। এই প্রযুক্তি বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থায়নে দ্রুত পরিবর্তন আনছে।
ব্লকচেইনের ব্লকগুলোর মধ্যে যখন একটি তথ্য ইনপুট দেওয়া হয় তখন ওই তথ্য ডিলিট করা বা ডেটাটির কোন ধরনের পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। কারণ, এক্ষেত্রে আপনি যদি একটি ব্লকে থাকা ডেটা পরিবর্তন করতে চান তাহলে আপনাকে ওই ব্লকটির সাথে তার আগের সবগুলো ব্লকের ডেটা পরিবর্তন করতে হবে। নাহলে সম্পূর্ণ ব্লকচেইনটি ইনভ্যালিড হয়ে যাবে বা আর কাজ করবে না। সম্পূর্ণ ব্লকচেইনের প্রত্যেকটি সিঙ্গেল ব্লকে মূলত তিনটি জিনিস থাকে- ডেটা, হ্যাশ এবং চেইনে তার আগের ব্লকটির হ্যাশ। অর্থাত্, ব্লকচেইনের থাকা প্রত্যেকটি ব্লকে থাকে সেই ব্লকটির নিজস্ব ডেটা, ব্লকটির নিজের হ্যাশ এবং ঠিক তার পেছনে যুক্ত থাকা আগের ব্লকটির হ্যাশ। হ্যাশ হচ্ছে মূলত একটি আইডেন্টিফায়ার। দুটি ব্লকের হ্যাশও কখনো মিলবে না। এই বিষয়টি অনেকটা মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্টের মত। এই হ্যাশগুলো জেনারেট হয় প্রত্যেকটি ব্লকের স্টোর করা ডেটা অনুযায়ী। যার মানে, একটি ব্লকের ডেটা যদি কোনরকম পরিবর্তন করা হয়, তাহলে ওই ব্লকটির হ্যাশও চেঞ্জ হয়ে যাবে। প্রত্যেকটি ব্লক যদি তার আগে যুক্ত থাকা হ্যাশটিও রাখে, তাহলে কোন ব্লকের ডেটা কেউ ইচ্ছামত চেঞ্জ করে ফেলতে পারবে না। তাই ব্লকচেইনে ইনপুট দেওয়া কোন ডেটা মুছে ফেলা বা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব।
সারাবিশ্বের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্লকচেইন প্রযুক্তি বিপ্লব আনতে চলেছে। সেই বিপ্লবের ঢেউ বাংলাদেশেও খুব শীঘ্রই আসবে এমনটি ধারণা করা যাচ্ছে।